
রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের আপস ঠেকাতে সক্রিয় হচ্ছেন জেলেনস্কি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখন তৃতীয় বছরে পা দিয়েছে এবং এর কোনো তাৎক্ষণিক অবসান দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। এই দীর্ঘমেয়াদী সংঘাত শুধু ইউক্রেন এবং রাশিয়াকেই নয়, বরং পুরো বিশ্বব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে—বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক সমীকরণে। এই পরিস্থিতিতে, যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেন, তবে তিনি যুদ্ধ অবসানের জন্য একটি দ্রুত ও কার্যকর সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন, যার মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার পথও খোলা থাকতে পারে। ট্রাম্প ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সময়ে দাবি করেছেন যে তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই যুদ্ধ শেষ করতে পারেন—এমন আত্মবিশ্বাস তিনি প্রকাশ করে চলেছেন।
অন্যদিকে, ভ্লাদিমির পুতিনও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং যুদ্ধকালীন চাপ থেকে মুক্তি পেতে চাইছেন। ফলে, যদি ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় আসেন, তবে দুই নেতার মধ্যে সমঝোতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে এই সম্ভাব্য সমঝোতা বা শান্তি প্রচেষ্টা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দৃষ্টিতে একটি গভীর উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, এমন কোনো শান্তি চুক্তি যদি ইউক্রেনকে ভূখণ্ড হারানোর দিকে ঠেলে দেয় বা কিয়েভের শর্ত বিবেচনা না করে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার স্বার্থে ভিত্তি করে গৃহীত হয়, তাহলে জেলেনস্কি তা মেনে নেবেন না।

জেলেনস্কির দৃষ্টিকোণ থেকে, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা যেকোনো শান্তির মূল ভিত্তি হতে হবে। তিনি একাধিকবার বলেছেন যে ইউক্রেন এক ইঞ্চি জমিও ছাড় দেবে না এবং কূটনৈতিক সমাধানের আগে রাশিয়াকে দখলকৃত অঞ্চল থেকে সরে যেতে হবে। কিন্তু ট্রাম্প যদি নিজের কৌশলগত চিন্তা ও বিশ্ব রাজনীতিতে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিকে গুরুত্ব দিয়ে কিয়েভকে চাপ প্রয়োগ করেন রাশিয়ার সঙ্গে আপস করতে, তবে তা জেলেনস্কির জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করবে।
অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, জেলেনস্কি এই ধরনের শান্তি উদ্যোগে বাধা দিতে আন্তর্জাতিক মহলে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করতে পারেন। তিনি পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর পার্লামেন্ট, নিরাপত্তা জোট যেমন ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে সমর্থন ধরে রাখতে সচেষ্ট হবেন এবং প্রচার করতে পারেন যে তড়িঘড়ি শান্তি আসলে একটি “ভুয়া শান্তি” যা ইউক্রেনের ক্ষতির কারণ হবে। পশ্চিমা জনমতকে প্রভাবিত করার জন্য জেলেনস্কি তার কৌশলে মিডিয়া ও আন্তর্জাতিক কূটনীতি ব্যবহার করতে পারেন, যার ফলে ট্রাম্প-পুতিনের আলোচনার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
সব মিলিয়ে, ট্রাম্প-পুতিনের সম্ভাব্য শান্তি প্রচেষ্টা, যদি তা ইউক্রেনের স্বার্থ উপেক্ষা করে হয়, তাহলে তা বাস্তবায়নে প্রধান বাধা হয়ে উঠতে পারেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। তাঁর দৃষ্টিতে, এই যুদ্ধ শুধু একটি আঞ্চলিক সংঘাত নয়—এটি ন্যায়বিচার, সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুনের প্রশ্ন। তাই কোনো আপসের চুক্তিকে তিনি যদি নিজের জাতীয় স্বার্থবিরোধী মনে করেন, তবে তা ঠেকাতে সর্বশক্তি দিয়ে এগিয়ে আসবেন—এমনটি বলাই যায়।