নেতানিয়াহুর জোটে ফাটল: গভীর রাজনৈতিক সংকটে ইসরায়েল সরকার

নেতানিয়াহুর জোটে ফাটল: গভীর রাজনৈতিক সংকটে ইসরায়েল সরকার

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ডানপন্থী জোট সরকার এখন গভীর রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। সম্প্রতি গাজা যুদ্ধ, বিচার বিভাগ সংস্কার ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ইস্যুতে সরকারে থাকা শরিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। এই মতবিরোধের ফলে নেতানিয়াহুর সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তার জোট সরকারের টিকে থাকা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে গঠিত বর্তমান সরকারটি ইসরায়েলের ইতিহাসে অন্যতম ডানপন্থী ও ধর্মীয় ভাবাপন্ন। এই সরকারে কট্টরপন্থী রাজনৈতিক দল যেমন ইটামার বেন গেভিরের জিউইশ পাওয়ার এবং বেজালেল স্মোত্রিচের রিলিজিয়াস সায়নিজম দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব রয়েছে। শুরু থেকেই এই দলগুলো নিজেদের চরমপন্থী অবস্থান ধরে রেখেছে এবং নেতানিয়াহুর ওপর চাপ সৃষ্টি করে নীতি নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করেছে।

গাজা যুদ্ধ চলাকালীন এবং যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন পরিকল্পনা নিয়ে সরকারের অভ্যন্তরে মতবিরোধ প্রকট হয়ে ওঠে। যুদ্ধ পরিচালনার কৌশল ও ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানো নিয়ে মন্ত্রিসভার মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। একাধিক মন্ত্রী সরাসরি নেতানিয়াহুর কৌশলের সমালোচনা করেছেন এবং দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছেন।

অন্যদিকে, বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে নেতানিয়াহু সরকারের পরিকল্পনা দেশে-বিদেশে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। এই সংস্কারের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা খর্ব করে সরকার নির্বাহী বিভাগকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে এবং বিভিন্ন স্তরের নাগরিক সমাজ, বিরোধীদল এমনকি সাবেক নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে জোট শরিকদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। কিছু কট্টর ধর্মীয় দল নতুন করে দাবি তুলেছে যে, তাদের ধর্মীয় আইন ও রাজনৈতিক শর্ত পূরণ না হলে তারা সরকার থেকে সরে দাঁড়াবে। ইতিমধ্যেই কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী জোট ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং সংসদে সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে ইসরায়েলে আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। নেতানিয়াহুর জন্য এটি শুধু রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ নয়, তার দীর্ঘদিনের ক্ষমতার ভিত্তি টিকিয়ে রাখার লড়াইও বটে। তিনি এখন এমন এক জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি, যেখানে তার নিজস্ব জোটই তার সরকারের সবচেয়ে বড় হুমকিতে পরিণত হয়েছে।

এই সংকট শুধু ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রেই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতেও একটি বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। জোট ভাঙলে এবং নেতানিয়াহু সরকার পতনের মুখে পড়লে, ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব কেমন হবে এবং তারা ফিলিস্তিন ও আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে কিভাবে সম্পর্ক গড়ে তুলবে – সেটিও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

CATEGORIES
TAGS
Share This