শেখ পরিবারের নামে থাকা ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন: নতুন উদ্যোগে সরকার
ঢাকা, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫: শেখ পরিবারের নামে থাকা ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করতে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন শিগগিরই জারি হতে পারে বলে জানিয়েছে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, “শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ নিয়ে সম্প্রতি নানা রকম আলোচনা, বিতর্ক এবং জনমতের চাপে সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।” যদিও শেখ পরিবারের অবদান জাতির জন্য অবিস্মরণীয়, তবে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কারণে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ক উঠে এসেছে।
এ উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং জনস্বার্থের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের লক্ষ্যে নতুন নামকরণ প্রস্তাবিত হয়েছে। এখনো পর্যন্ত সরকার কিছু প্রস্তাবনা গ্রহণ করেছে এবং সেগুলোর তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। নতুন নামকরণের ক্ষেত্রে শিক্ষার মানোন্নয়ন ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক মান অর্জনকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
যদিও শেখ পরিবারের নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে গভীরভাবে জড়িত, তবে গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এই নামকরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামকরণে পরিবারভিত্তিক ঐতিহ্যের পরিবর্তে জাতীয় ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতীয় সংস্কৃতির গুরুত্ব দেয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলির তালিকা
সরকারি তথ্যে জানা গেছে, শেখ পরিবারের নামে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে প্রধানত নিম্নলিখিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রয়েছে:
১. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
২. শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ
৩. শেখ রেহানা বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ
৪. শেখ সাহেব কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল
৫. শেখ জামাল ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি
৬. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
৭. শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা
৮. শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
৯. শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ
১০. শেখ রেহানা ফাইন আর্টস বিশ্ববিদ্যালয়
১১. শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং
১২. শেখ রেহানা ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি
১৩. শেখ হাসিনা নার্সিং কলেজ
প্রাথমিকভাবে এই ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তবে পরবর্তী সময়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম পরিবর্তনও হতে পারে।
এ উদ্যোগ সম্পর্কে শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিছু অংশের মানুষ একে প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, তবে অন্যদের মতে, এর মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের অবদানকে আংশিকভাবে অস্বীকার করা হতে পারে।
একই সাথে, এই পদক্ষেপের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের ক্ষতি হবে না, এমন আশ্বাস দিয়েছে সরকার। তারা জানিয়েছে, নাম পরিবর্তন হলেও এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান এবং গবেষণার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ব্যাঘাত ঘটবে না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই পরিবর্তনগুলি বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এবং বোর্ড অব গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা করছে।