মৃত্যুর কারণ খিদে, আবর্জনার ট্রাক যখন শেষ ভরসা

মৃত্যুর কারণ খিদে, আবর্জনার ট্রাক যখন শেষ ভরসা

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি অবরোধের তৃতীয় মাসে প্রবেশ করার পর খাদ্য, পানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে অন্তত ৫৭ জন ফিলিস্তিনি অনাহারে মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু, অসুস্থ এবং প্রবীণ।

গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েল যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে খাদ্যকে ব্যবহার করছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে যেন তারা ইসরায়েলের ওপর সীমান্ত খুলে দিতে চাপ সৃষ্টি করে।

আল জাজিরা আরবির একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, শত শত ত্রাণবাহী ট্রাক মিশরের আরিশ শহর পর্যন্ত দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে আছে, যা রাফাহ সীমান্ত থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু এইসব ট্রাক এখনো গাজায় প্রবেশ করতে পারেনি।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা শহরের রান্তিসি হাসপাতালে শনিবার অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় ভোগা এক শিশু মারা যায়। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বছরের শুরু থেকে ৯,০০০-এরও বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টির কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শিশুরা রাস্তার ধারে আবর্জনার স্তূপে খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে। গাজার পরিস্থিতি ‘চরমে’ পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সাংবাদিক হানি মাহমুদ।

গাজা শহরের বাস্তুচ্যুত আহমাদ আল-নাজ্জার বলেন, ‘একটি খাবার জোগাড় করাই এখন অসম্ভব একটি চ্যালেঞ্জ। প্রতিদিন কোনো না কোনো দাতব্য সংস্থা ঘোষণা করছে যে তারা সহায়তা দিতে পারছে না।’

রাফাহর কুয়েতি হাসপাতালের পরিচালক সুহাইব আল-হামস জানিয়েছেন, হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধের ৭৫ শতাংশই প্রায় ফুরিয়ে গেছে এবং আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বেশিরভাগ সেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, ‘সীমান্ত না খুললে এবং চিকিৎসা সহায়তা না এলে প্রতিদিন রোগীরা ধীরে ধীরে মারা যাবে।’

ইসরায়েলি বোমা হামলায় গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২৭৫ জন আহত হয়েছেন। শনিবার আল-ফাখারি শহরে একটি বাড়িতে হামলায় দুই নারী নিহত হন এবং গাজা উপকূলে এক জেলেকে হত্যা করা হয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২,৪৯৫ জনে এবং আহত হয়েছেন ১,১৮,৩৬৬ জন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও বহু মানুষ আটকে রয়েছেন, যারা সম্ভবত আর বেঁচে নেই।

CATEGORIES
TAGS
Share This