
পটুয়াখালীতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়: বাউফল ফেরিঘাটের ইজারা বাতিল
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় ফেরিতে যাত্রী ও যানবাহনের কাছ থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) ঘাটটির ইজারা বাতিল করেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে চার গুণ পর্যন্ত বেশি আদায় করা হচ্ছিল।
সওজ জানায়, এ অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার পর ফেরিঘাট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ইজারাদারকে তিনবার নোটিশ দেয়া হয়। তিনি কোনো জবাব না দিলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং অভিযোগের সত্যতা মিললে ইজারা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ২৪ জুলাই ইজারাদার ঘাটের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বুঝিয়ে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব ছাড়েন।

সওজ সূত্র বলছে, বাসের জন্য নির্ধারিত ভাড়া ছিল ৪৫ টাকা, মিনিবাসের জন্য ২৫ টাকা—কিন্তু আদায় করা হচ্ছিল যথাক্রমে ৩০০ ও ২০০ টাকা। ভারী ট্রাকের নির্ধারিত ভাড়া ১০০ টাকার জায়গায় আদায় করা হচ্ছিল ৫০০ টাকা পর্যন্ত। প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের জন্য ১৫ ও ২৫ টাকার স্থলে নেওয়া হচ্ছিল ১০০ টাকা। এমনকি মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার ক্ষেত্রেও দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই অনিয়মের বিরুদ্ধে পটুয়াখালী সড়ক বিভাগে মৌখিক এবং লিখিত অভিযোগ জানানো হয়, যার একটি পৌঁছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এর কাছেও।
নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে প্রথমে ইজারাদারকে তিনবার নোটিশ দেন সওজ-এর নির্বাহী প্রকৌশলী জামিল আক্তার লিমন। কোনো জবাব না পেয়ে তিনি সরেজমিন তদন্ত করেন। পরে চিফ ইঞ্জিনিয়ারের নির্দেশে আরও একটি তদন্ত টিম ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। উভয় তদন্তেই অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে চিফ ইঞ্জিনিয়ারের দপ্তর থেকে ইজারা বাতিলের নির্দেশ আসে।
অভিযুক্ত ইজারাদার শিবু লাল দাস, যিনি স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত, তার দাবি—“আমার বিরুদ্ধে অন্যায় করা হয়েছে। আমি আগের ইজারাদারের মতোই ভাড়া নিয়েছি।” তিনি আরও জানান, বিষয়টি এখন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন, এবং আশাবাদী যে তিনি আবারও ইজারা পাবেন। ভাড়া কমানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি মন্তব্য করেন, “ভুল ভাড়া নির্ধারণ করেছে সরকারই।”
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। তাদের মতে, এতে যাত্রীসাধারণের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হবে।
এই ঘটনাটি শুধু অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রশাসনের তৎপরতা নয়, একইসাথে প্রমাণ করে—জনগণের অভিযোগ ও প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব, যদি কর্তৃপক্ষ আন্তরিক থাকে।