
আদানির সঙ্গে চুক্তিতে স্বার্থবিরোধী ধারা পাওয়া গেছে, বাতিল করতে হবে আন্তর্জাতিক আদালতে
২০১৭ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগ্রহে বাংলাদেশ আদানি গ্রুপের সঙ্গে ১৪৯৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চুক্তি সই করে। এ চুক্তি সই করা হয় অত্যন্ত গোপনে, তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার এর মাধ্যমে এটি চূড়ান্ত করে।
চুক্তির শর্তে উল্লেখ রয়েছে যে, ন্যূনতম বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ না হলেও বাংলাদেশকে নির্দিষ্ট পরিমাণ খরচ পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত কয়লা যে মানেরই হোক না কেন, আন্তর্জাতিক বাজার অনুযায়ী দাম পরিশোধ করতে হবে। ভারত অংশের সঞ্চালন লাইনের সম্পূর্ণ খরচও বাংলাদেশকেই বহন করতে হবে।
চুক্তির এই শর্তগুলো দেশের স্বার্থবিরোধী বলে মন্তব্য করেছে এক পর্যালোচনা কমিটি। চুক্তির বৈধতা নিয়ে একটি রিট আবেদন দায়ের করা হলে, হাইকোর্ট কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। চলতি মাসে কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের কথা রয়েছে।
কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আদানি গ্রুপই চুক্তির পুরো সুবিধা ভোগ করছে, এবং সরকার একতরফাভাবে এই চুক্তি বাতিল করতে পারে। তবে এতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে।
এদিকে, সাধারণ মানুষ চুক্তিটি বাতিলের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, চুক্তিটি আর্থিক বা রাজনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে হয়েছে। চুক্তির অসংগতি প্রমাণিত হলে, এটি বাতিল করতে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হতে হতে পারে, তবে মামলায় জয়ের সম্ভাবনাও রয়েছে।
জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন জানিয়েছেন, প্রথমত সালিশ আদালতে হয়তো হারতে হতে পারে, তবে পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে এবং সেখানে বিষয়টি সঠিকভাবে উপস্থাপন করা গেলে মামলা জেতার সম্ভাবনা রয়েছে।
ড. জাহিদ হোসেন আরো বলেন, যদি চুক্তির পেছনে দুর্নীতির প্রমাণ মেলে, তবে পরিস্থিতি বদলে যাবে, তবে তা আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে, যা প্রমাণ করা সহজ হবে না।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ সভাপতি অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে, যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নেয়া হয়নি। তিনি সরকারকে সমালোচনা করে বলেন, কমিটি গঠন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।
অপরদিকে, অন্যান্য চুক্তির ক্ষেত্রে বিল পরিশোধে বিলম্ব হলে ১৫ শতাংশ সুদ দেয়ার শর্ত না থাকলেও আদানি চুক্তিতে তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই শর্ত কাজে লাগিয়ে আদানি গ্রুপ চক্রবৃদ্ধি সুদ দাবি করছে।