“সৌদি ‘স্লিপিং প্রিন্স’ আর নেই: পিতার বিশ্বাস, ছেলের ২০ বছরের নীরব যুদ্ধের অবসান”

“সৌদি ‘স্লিপিং প্রিন্স’ আর নেই: পিতার বিশ্বাস, ছেলের ২০ বছরের নীরব যুদ্ধের অবসান”

সৌদি আরবের রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স আল-ওয়ালিদ বিন খালিদ বিন তালাল একসময় ছিলেন একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের প্রতীক। কিন্তু মাত্র ১৫ বছর বয়সে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তার জীবন থমকে যায়। ২০০৫ সালে লন্ডনে সামরিক প্রশিক্ষণের সময় তাঁর গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে মাথায় মারাত্মক আঘাত ও অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কারণে তিনি কোমায় চলে যান। এই কোমা অবস্থাই টানা ২০ বছর স্থায়ী হয়, এবং এর মধ্যেই বিশ্ববাসীর কাছে তিনি পরিচিত হন ‘স্লিপিং প্রিন্স’ নামে।

দুর্ঘটনার পর থেকে তাঁকে সৌদি আরবের রিয়াদে কিং আবদুলআজিজ মেডিকেল সিটিতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। চিকিৎসকেরা বারবার পরিবারকে পরামর্শ দেন তাঁর লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করে দেওয়ার জন্য, কারণ তাঁর সেরে ওঠার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু তাঁর বাবা, প্রিন্স খালিদ বিন তালাল, সেই পরামর্শ মানেননি। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন—আল্লাহ চাইলে তাঁর ছেলে একদিন ঠিকই সুস্থ হয়ে উঠবে। এই বিশ্বাস থেকেই তিনি একটানা দুই দশক ধরে ছেলের চিকিৎসা অব্যাহত রাখেন।

তবে সকল আশা ও অপেক্ষার অবসান ঘটে ২০২৫ সালের ১৯ জুলাই, যখন রিয়াদে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৩৬ বছর। দীর্ঘ ২০ বছর কোমায় কাটানোর পর প্রিন্স আল-ওয়ালিদের মৃত্যু রাজপরিবারসহ বিশ্বজুড়ে অনেককে গভীরভাবে নাড়া দেয়। পরদিন ২০ জুলাই, রিয়াদের ইমাম তুরকি বিন আব্দুল্লাহ মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাজপরিবারের সদস্য ছাড়াও সাধারণ মানুষ অংশ নেয়। মহিলাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় কিং ফয়সাল স্পেশালিস্ট হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।

এই দীর্ঘ ঘটনাক্রম সৌদি আরবের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহলেও আলোড়ন তুলেছে। কেউ এটিকে অবিচল পিতৃত্বের নিদর্শন হিসেবে দেখেছেন, কেউ বা বিশ্বাস, ভালোবাসা ও মানবিকতার জাগ্রত প্রতীক হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন।

স্লিপিং প্রিন্সের গল্প কেবল এক ব্যক্তির বা এক পরিবারের নয়, এটি এক গভীর মানবিক উপলব্ধি—যেখানে প্রত্যাশা, প্রার্থনা ও ভালোবাসা একত্র হয়ে দুই দশক ধরে এক জীবনকে ঘিরে রেখেছিল। তাঁর মৃত্যু একটি যুগের সমাপ্তি হলেও, তাঁর প্রতি পরিবারের অটল বিশ্বাস এবং ভালোবাসা বহু মানুষের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।

CATEGORIES
TAGS
Share This