মিয়ানমারের গ্রামবাসীরা বাধ্য হয়ে অবৈধভাবে ভারতে কিডনি বিক্রি করছে

মিয়ানমারের গ্রামবাসীরা বাধ্য হয়ে অবৈধভাবে ভারতে কিডনি বিক্রি করছে

মিয়ানমারের গ্রামবাসীরা আর্থিক সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে কিডনি বিক্রি করছে। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজ এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, যার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অসহনীয়ভাবে বেড়ে যায়। এর ফলে অনেক গ্রামবাসী নিজেদের অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে অবৈধভাবে ভারতে কিডনি বিক্রির জন্য পাড়ি জমাচ্ছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য একটাই—ঋণ পরিশোধ ও জীবিকা নির্বাহের জন্য কিডনি বিক্রি করা।

মিয়ানমারের একজন কৃষক, জেয়া, বিবিসিকে জানান, “আমি শুধু একটি বাড়ি কিনতে এবং ঋণ পরিশোধ করতে চেয়েছিলাম, এই কারণেই আমি আমার কিডনি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

জেয়ার গ্রাম, যা মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন থেকে কয়েক ঘণ্টার দূরত্বে, সেখানে মোট আটজনের সন্ধান পাওয়া গেছে যারা কিডনি বিক্রির উদ্দেশ্যে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। তবে, মিয়ানমার ও ভারত উভয় দেশেই মানব অঙ্গ কেনা-বেচা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ।

জেয়ার কথায়, “আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমি একজন দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করি, যিনি প্রথমে আমার মেডিকেল পরীক্ষা করান। কয়েক সপ্তাহ পর ওই দালাল আমাকে জানায়, আমি কিডনি বিক্রির জন্য একটি গ্রহীতার খোঁজ পেয়েছি।”

জেয়া আরও জানান, ওই দালাল তাকে ভারতে যেতে বলেছিলেন, যেখানে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হবে। দালালটি এমনভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করেছিল যেন সে বিবাহিত সম্পর্কের মাধ্যমে কিডনি দান করছে, যদিও তিনি রক্তের আত্মীয় নন, বরং দূর সম্পর্কের আত্মীয় হিসেবে দেখানো হয়েছিল।

ভারতে, কিডনি দানে যদি দাতা ও গ্রহীতা নিকটাত্মীয় না হন, তবে তাদের মধ্যে সম্পর্কের উদ্দেশ্য পরোপকারী হিসেবে প্রমাণ করতে হয়, না হলে অস্ত্রপ্রচার করা হয় না।

অবশ্য, ভারতে কিডনি প্রতিস্থাপন নিয়ে কিছু চক্র সক্রিয় রয়েছে। শুধু ভারতে নয়, এশিয়া জুড়ে অবৈধ মানব অঙ্গ বিক্রি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, ২০১০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী কিডনি প্রতিস্থাপন ৫০% এরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে, জরিপ অনুযায়ী, কিডনি প্রতিস্থাপন বিশ্বব্যাপী চাহিদার মাত্র ১০% পূরণ করে।

বিশ্বব্যাপী মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কালোবাজারি একটি অবৈধ কার্যক্রম এবং ডব্লিউএইচও ২০০৭ সালে অনুমান করেছিল যে প্রতিস্থাপিত কিডনির ৫ থেকে ১০% কালোবাজার থেকে আসে, তবে প্রকৃত পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দারিদ্র্য এবং আর্থিক সংকটের কারণে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে, যেমন নেপাল, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে অবৈধ কিডনি বিক্রির ঘটনা বাড়ছে।

CATEGORIES
TAGS
Share This