
বাংলাদেশে ২৯ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প: ট্রাম্পের মন্তব্য ভুল, বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে ডজ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি দাবি করেছেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবেশ শক্তিশালী করতে তার দেশের সরকারের দেয়া ২৯ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা একটি ছোট বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানে গেছে, যা দুইজনের পরিচালনায় এবং এর নাম অনেকেই শোনেনি। তার এই মন্তব্য গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে গভর্নরদের বৈঠকে করা হয়, যা বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আলোচিত হয়েছে। ট্রাম্পের মন্তব্যের পর সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়াতে থাকে।
তবে, বিষয়টি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে নানা ভাবে। একদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি (ডজ) জানিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশে মার্কিন করদাতাদের ২৯ মিলিয়ন ডলারের খরচ হওয়ার আগেই স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (এসপিএল) প্রকল্পের অর্থায়ন বাতিল করেছে। অন্যদিকে, ট্রাম্প বলেছেন, এই অর্থ দুটি ব্যক্তির পরিচালিত বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানে গেছে।
এই বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করেছে ডিসমিসল্যাব, যা ফ্যাক্টচেকের কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি যাচাই করে দেখেছে, ট্রাম্পের দাবি ভুল এবং ডজের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর। কারণ, ২৯ মিলিয়ন ডলার শুধুমাত্র দুটি ব্যক্তির হাতে যায়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল, একটি বড় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া, ডজ দাবি করেছে যে, অর্থ সাশ্রয় হয়েছে, কিন্তু প্রকল্পটি বাতিল করা সত্ত্বেও ২৯ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়নি।
এসপিএল প্রকল্পটি ২০১৭ সালে শুরু হয় এবং এটি বাস্তবায়ন করেছে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর দক্ষতা বাড়ানো, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক সহিংসতা কমানো। এই প্রকল্পের অধীনে রাজনৈতিক কর্মী ও নাগরিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যাতে তারা দক্ষ নেতা হতে পারে, ইনক্লুসিভ নীতি অনুসরণ করতে পারে এবং সংঘাত কমাতে সহায়ক হতে পারে।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল কেবল দুটি ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান নয়। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত একটি বড় প্রতিষ্ঠান, যার বিশ্বব্যাপী ২১৮টি প্রকল্প রয়েছে। বাংলাদেশে তাদের অন্তত ১২টি প্রকল্প রয়েছে। এসপিএল প্রকল্পটি ইউএসএআইডি এবং যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (DFID) সহায়তায় পরিচালিত হয়েছে।
এছাড়া, এসপিএল প্রকল্পের আওতায় ‘পলিটিক্স ম্যাটার্স বাংলাদেশ’ নামে একটি ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে এবং ৫৩৬ জন রাজনৈতিক নেতাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, যুক্তরাজ্য সরকারের অংশীদারিত্বে আরেকটি প্রকল্প, ‘সেভ’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘাত প্রতিরোধের লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
ডজের বিভ্রান্তি:
ডজ ১৬ ফেব্রুয়ারি তাদের এক পোস্টে জানিয়েছিল যে, তারা ১৫টি প্রকল্পের অর্থায়ন বাতিল করেছে, যার মধ্যে ২৯ মিলিয়ন ডলারের এসপিএল প্রকল্পও ছিল। তবে, ইউএসস্পেন্ডিং ডট গভ-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটি আট বছর ধরে চলছিল এবং এটি ২০২৫ সালের অক্টোবরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পটি বাতিল হওয়ার মাত্র ৮ মাস আগে, তাই এটি ২৯ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব নয়।
ইউএসস্পেন্ডিং ডট গভ-এ থাকা তথ্য অনুযায়ী, এসপিএল প্রকল্পটির জন্য ২৯.৯ মিলিয়ন ডলার অনুমোদিত হলেও, ২০২৫ সাল পর্যন্ত মাত্র ১৬.৯ মিলিয়ন ডলার বিতরণ হয়েছে। অর্থাৎ, প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ইতিমধ্যেই অর্ধেকের কিছু বেশি অর্থ পেয়েছে। এই কারণে ডজের দাবি সঠিক নয়।
ডজের দেয়া তথ্যে কিছু ভুলও চিহ্নিত করা হয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডজের রিপোর্টে বেশ কিছু ভুল হিসাব করা হয়েছে, যেখানে একই চুক্তি একাধিকবার গণনা করা হয়েছে এবং আংশিক চুক্তির বাতিলকে পুরো চুক্তির বাতিল হিসেবে দেখানো হয়েছে।