
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ দরিদ্র দেশগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০২২ অনুযায়ী, গত এক দশকে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে অর্থায়ন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এই প্রবণতা শুধুমাত্র বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সংকটের কারণে নয়, বরং এই দেশগুলোর ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা ও অর্থ ব্যবহারের দক্ষতার উপরও প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ্বব্যাংক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (IDA) তহবিল থেকে ৭৮টি দরিদ্র দেশে ঋণ এবং অনুদান প্রদান করে থাকে। এই তহবিলের মূল অর্থ আসে প্রধানত সদস্য দেশগুলোর অনুদান এবং ঋণগ্রহণকারী দেশগুলোর পরিশোধিত অর্থ থেকে। তবে, বর্তমানে বিশ্বব্যাংক নিজেই অর্থায়নের জন্য ঋণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যার ফলে তার অনুদানের পরিমাণ কমে গেছে। বিশ্বব্যাংক যদি ঋণ নেয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য দেশগুলোর জন্য অনুদানের পরিমাণও সীমিত হয়ে যায়। এই পরিস্থিতি দরিদ্র দেশগুলোর জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, কারণ তারা ইতিমধ্যেই ঋণ পরিশোধের জন্য লড়াই করছে।
এছাড়া, দরিদ্র দেশগুলোর ঋণ পরিশোধের অক্ষমতা এবং ঋণের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। অনেক সময় এই দেশগুলো ঋণের অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় করতে পারে না, যার ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এতে, দাতা সংস্থাগুলোর জন্য এসব দেশগুলোতে আর্থিক সহায়তা প্রদান আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে, দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা এবং বাজেটের অপ্রতুলতা এসব সমস্যাকে আরো জটিল করে তোলে।
এই পরিস্থিতিতে, মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে দাতা সংস্থাগুলোর আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ এবং কেনিয়ার মতো দেশগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবিলায় ঋণ প্রদানে দাতা সংস্থাগুলোর আগ্রহ বেড়েছে। জলবায়ু সংকটের কারণে এসব দেশে পরিবেশগত বিপর্যয়ের আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং এই সমস্যা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এর ফলে, দাতা সংস্থাগুলোর সহায়তা এখন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নয়, বরং পরিবেশগত ও সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
অক্টোবর ২০২৪-এ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) একটি ঘোষণা দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে তারা মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য অতিরিক্ত ঋণের সুদের হার কমাবে। এর ফলে, এই দেশগুলো আর্থিক সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা পাবে, বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত সমস্যাগুলোর সমাধান এবং দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য। তবে, এই সহায়তার সঙ্গে সম্পর্কিত শর্তাবলী আরও কঠোর হতে পারে, যা দেশের অর্থনৈতিক নীতি ও পরিকল্পনায় নতুন চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করতে পারে।